1. ma.zaman.news@gmail.com : Asaduzzaman Mollah : Asaduzzaman Mollah
  2. jmitsolution24@gmail.com : support :
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ০৮:০৪ পূর্বাহ্ন

আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে নারী ও অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ

  • Update Time : শনিবার, ২৮ জুন, ২০২৫
  • ২৬ Time View

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ তুলে প্রধান উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগপত্রে তার বিরুদ্ধে ব্যাংক পরিচালনায় দীর্ঘদিনের অনিয়ম, ঋণ কেলেঙ্কারি, শেয়ার কারসাজি, অর্থপাচার এবং নারী কর্মকর্তাদের প্রতি অসদাচরণের অভিযোগ উত্থাপন করা হয়।

অভিযোগে বলা হয়েছে, আলমগীর কবির ২০০৪ সাল থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একটানা ২০ বছর সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা উপেক্ষা করে শেয়ার কারসাজি, অযোগ্য প্রতিষ্ঠানে ঋণ প্রদান, সুদ মওকুফ এবং নামমাত্র জামানতে নামে-বেনামে ঋণ অনুমোদনের মাধ্যমে ব্যাংকটিকে আর্থিক সংকটে ফেলেছেন। এসব অনিয়মে ব্যাংকের হাজার হাজার গ্রাহকের আমানত ঝুঁকির মুখে পড়ে।

অভিযোগ অনুযায়ী, তার সময়কালে ব্যাংকের পরিচালনায় একক আধিপত্য বজায় রেখে নিজের ঘনিষ্ঠদের বিশেষ সুবিধা দিয়েছেন। চলতি ঋণের সুদ মওকুফ থেকে শুরু করে, নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকের অর্থ ব্যবহারের অভিযোগও রয়েছে। ব্যাংকের সরঞ্জাম কেনা, শাখা সম্প্রসারণ, শাখার ইন্টেরিয়র ডিজাইন, বুথ স্থাপন এবং সফটওয়্যার সরবরাহের মতো কার্যক্রমেও নিয়ন্ত্রণ ছিল তার।

অভিযোগে আরও দাবি করা হয়, এসব অনিয়মের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় বিলাসবহুল বাড়ি, হোটেল ও বার রয়েছে তার। দেশের ভেতরেও গুলশান, বসুন্ধরা, বাংলামোটর, গাজীপুর, শ্রীপুর-ভাওয়াল এবং কাঁচপুর এলাকায় রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট ও শত শত বিঘা জমি।

এছাড়া, অভিযোগে নারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনৈতিক আচরণের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়, চেয়ারম্যান থাকাকালে আলমগীর কবির অফিসের ভেতরে ও বাইরে কিছু নারী কর্মকর্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখতেন। পছন্দের নারীদের এপিএস হিসেবে নিয়োগ, পদোন্নতি দেওয়া এবং কিছু নারী কর্মকর্তাকে একান্ত সময় কাটানোর জন্য দেশ-বিদেশে সফরে নেওয়ার অভিযোগও তোলা হয়েছে। এমনকি কিছু নারী কর্মকর্তাকে অনৈতিক সম্পর্কে জড়াতে বাধ্য করার অভিযোগও রয়েছে। তার নারীসঙ্গের বিষয়টি নিয়ে একাধিক কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কয়েকজন নারী ভুক্তভোগী বর্তমানে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরের নারী সংশ্লিষ্টতা নিয়ে অভিযোগে আরও বলা হয়, তার ফ্লোরে বিশেষ নারী কর্মকর্তা ও অতিথিদের আনাগোনা ছিল নিয়মিত। নারী সরবরাহে একটি দালালচক্র সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিল, যারা বড় অঙ্কের ঋণ সুবিধা পেতে এসব কার্যক্রমে যুক্ত হতো বলে দাবি করা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে, আলমগীর কবির তার ঘনিষ্ঠ নারীদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাইয়ে দেন। এর মধ্যে সাউথইস্ট ব্যাংক পরিচালিত গ্রিন স্কুল এবং ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড-এ এসব নিয়োগ হয়েছে। বে লিজিং বর্তমানে চরম আর্থিক সংকটে থাকা একটি প্রতিষ্ঠান, যা ব্যাংক থেকে ২৩২ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে এখনো পরিশোধ করেনি।

অর্থ ফেরত না দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে সাউথইস্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বহুবার চিঠি দিয়েছে বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে। ওই ঋণের বিপরীতে শুধু মূলধনই নয়, সুদও ফেরত আসেনি। ব্যাংক কোম্পানি আইনের ২৭(১-খ) ধারা লঙ্ঘন করে বে লিজিংকে এই ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

বে লিজিংয়ের বর্তমান চেয়ারম্যান হচ্ছেন আলমগীর কবিরের স্ত্রী সুরাইয়া বেগম। অভিযোগে বলা হয়, বে লিজিং মূলত তার পারিবারিক প্রতিষ্ঠান। এর পরিচালনা পর্ষদেও আলমগীর কবিরের নিকট আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠজনরা রয়েছেন। ফলে এই লেনদেনকে ‘সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে লেনদেন’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এছাড়া অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, ব্যাংকের টাকা ব্যবহার করে আলমগীর কবির ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বে লিজিং ও এশিয়া ইন্স্যুরেন্স—এই তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল শেয়ার কিনে পরিচালনা পরিষদে নিজের ও পুত্র রাইহান কবিরের উপস্থিতি নিশ্চিত করেন। পরবর্তীতে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে এসব কোম্পানির অংশীদারিত্ব নিয়ন্ত্রণ করেন।

শেয়ার কারসাজির অভিযোগেও আলমগীর কবিরকে দায়ী করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, তিনি একটি শেয়ার সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে ছিলেন, যার সঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কিছু পরিচালকও যুক্ত। এই সিন্ডিকেটের কারণে বহু সাধারণ বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ইতিমধ্যে শেয়ার কারসাজির দায়ে আলমগীর কবিরকে ১২ কোটি টাকা জরিমানা করেছে।

এছাড়া অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, তার বেয়াইয়ের মালিকানাধীন লুব-রেফ বাংলাদেশ লিমিটেডকে বেআইনিভাবে ৫৪ কোটি টাকার বেশি ঋণ মওকুফ করে দেওয়া হয়। অভিযোগে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও আছে—যেখানে বলা হয়েছে, ২০ বছরে একাধিকবার সরকারকে কোটি কোটি টাকার অনুদান দিয়েছেন তিনি, যা ব্যাংকের স্বার্থবিরোধী।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে তিনি ২০২৪ সালে গণ-আন্দোলনের মুখে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন। তবে এখনো তিনি পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে বহাল আছেন।

অভিযোগকারীরা আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে তদন্ত ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এবং তার পরিচালনা পর্ষদ থেকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024